আকাশছোঁয়া ডেস্ক : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির একজন নেতার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে এবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে দলের কার্যালয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন দলটির একজন নেত্রী।
ঢাকার পল্টনে সিপিবির দলীয় কার্যালয়ের পাঁচতলায় তিনদিন ধরে অনশন করছেন কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ও গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী জলি তালুকদার। খবর বিবিসি বাংলার।
বিবিসি বাংলার কাছে তিনি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন, তবে অনশনের কারণ হিসাবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত জানাতে চাননি।
”আমি যা বলার দলকে বলেছি। এটা আমাদের দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। দলের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আশা করছি, দলের ভেতরেই এর একটা সমাধান হবে,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন জলি তালুকদার।
কী অভিযোগ
সিপিবি সূত্রে জানা গেছে, জলি তালুকদার তেসরা মার্চ দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
সেখানে তিনি বলেছেন, ২৮শে ফেব্রুয়ারি বাম গণতান্ত্রিক জোটের একটি সমাবেশে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় দলটির একজন নেতা তাকে যৌন হয়রানি করেছেন।
তার অভিযোগ: ব্যানার ধরে রাখার সময় তার শরীরের স্পর্শকাতর অংশে কয়েকবার ধাক্কা দেয়া হয়। তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করার পরেও তিনি আবারো এরকম আচরণ করেন। একপর্যায়ে তিনি মিছিল থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন।
কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ”কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি আমার আহ্বান থাকলো, একজন অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য যারা এই ষড়যন্ত্রমূলক কৌশল নিয়েছে, তাদের ব্যাপারেও যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া পার্টির কর্তব্য। পার্টি যেন সে কর্তব্য পালনে পিছপা না হয়।”
ছয় মাসের বেশি সময় ধরে এর বিচার না করে উল্টো তাকে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
এখন তিনি পল্টন কার্যালয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন যাতে কেন্দ্রীয় কমিটি এই ঘটনার সুরাহা করে।
তিনি যেখানে অনশন করছেন, সেখানে তাঁর মাথার কাছে থাকা দুইটি প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে: ”সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে নিপীড়কের পক্ষ নিয়ে আমার প্রতি যে অন্যায় ট্রায়াল চালিয়েছে, তার বিচার চাই। নিপীড়কের বিচার না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে।”
অভিযুক্ত নেতা কী বলছেন
যার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে তিনি এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে তা নাকচ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন জলি তালুকদারের সঙ্গে তার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, ”এটা একেবারেই মিথ্যা অভিযোগ। মিছিলের সামনে থাকলে সেখানে অসংখ্য ক্যামেরা কাজ করে। সচিবালয়ের ওখানে সিসি ক্যামেরাও আছে।”
”আসলে তার সঙ্গে রাজনৈতিক কিছু মতপার্থক্য আছে। রাজনৈতিকভাবে আমাকে ধ্বংস করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। সামনে কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন, সেখানে সুবিধা নেয়ার জন্য তিনি এসব অভিযোগ করছেন বলে আমার ধারণা। ‘
সিপিবির নেতাদের বক্তব্য
সিপিবি বলছে, তেসরা মার্চ এই অভিযোগ দেয়া হলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত ছয় মাসে এই ব্যাপারে তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
দলের নেতারা বলছেন, কিছুদিন আগে এবিষয়ে তদন্ত করে একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির একজন সদস্য, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লুনা নূর বিবিসি বাংলাকে বলছেন, তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে তদন্ত করেছেন, সেখানে কোন পক্ষপাত করা হয়নি।
সিপিবির একজন নেতার বিরুদ্ধে আরেকজন নেতার যৌন নিপীড়নের অভিযোগকে দলের জন্য বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। সেই সঙ্গে অভিযোগ ওঠার পরে ছয়মাসেও এর কোন সুরাহা করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ”এরকম একটি অভিযোগ ওঠার পর বিলম্ব করা ঠিক হয়নি। এই ধরনের ঘটনা হওয়া উচিত নয়। এটার ব্যাপারে আরো আগে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়েছে। কিন্তু কারণ যাই হোক, এই দেরির জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।”
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছে, সেখানে এই বিষয়ে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।