আকাশছোঁয়া ডেস্ক : সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অত্যন্ত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সংগঠন দৃকের ৩১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী ও শৈল্পিক কর্মসূচীর ওপর যেভাবে সরকারী দলের কর্মীদের লেলিয়ে দিয়ে কর্মসূচী বানচাল করার অপচেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন ৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
বিবৃতিতে তারা জানান, আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারী নাগরিকবৃন্দ শান্তিপূর্ণ শৈল্পিক কর্মকাণ্ডে বাধা, শিল্পীদের ওপর আক্রমণ, এবং সংবিধান স্বীকৃত প্রতিবাদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও জোরালো প্রতিবাদ জানাই।
দৃকের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের পাতা থেকে পুরো কর্মসূচীর লাইভ করা হয়েছিল এবং আমরা সেটি দেখেছি। আমরা পরিস্কার দেখতে পেয়েছি, রাজু ভাস্কর্যের সামনে সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী ও শৈল্পিক কর্মসূচী যখন চলছিল তখন আজিমপুর, নীলক্ষেত ও লালবাগের (একাংশ) নিয়ে গঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিকের নেতৃত্বে ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচারের দাবীতে শ্লোগান তুলতে তুলতে শখানেক সরকারী দলের কর্মীরা সন্ত্রাসীদের মতো করে চলমান প্রদর্শনী ও শৈল্পিক কর্মসূচীর স্থানে মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং অধিকার কর্মী-শিল্পীদের চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে। এসময় কাউন্সিলর মানিক আয়োজক অধিকার কর্মী-শিল্পীদের বলেন যে “আগে ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচার হতে হবে। তার আগ পর্যন্ত অন্য কোন কিছুর বিচার হওয়া চলবে না”। কাউন্সিলর মানিকের নেতৃত্বে সরকার দলীয় লোকেরা, সেখানে ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে, এবং প্রদর্শনীর ছবি কেড়ে নেয়, মোবাইল ক্যামেরা নিয়ে যেতে চায়, মানবাধিকারের দৃষ্টিতে অবাঞ্ছিত স্লোগান প্রদান করে, এমনকি দৃকের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যানারের পিছনে নিজেদের আনা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা চারদিক থেকে ঘেরাও অবস্থা এতকিছুর মধ্যেও প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে থাকলে সরকারদলীয় লোকজন একপর্যায়ে তাদের মাইকও কেড়ে নেয়। এই পুরো আক্রমণ প্রক্রিয়ায় পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ এবং এই শান্তিপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর ওপর আক্রমণে তাঁরা ছিলেন নীরব দর্শক। এরপর, তাৎক্ষণিক ক্রসফায়ারের প্রতিবাদকারীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সরকারদলীয় লোকজনও সেই মিছিলের পিছু পিছু মারমুখী ঢঙে মিছিল করে আসতে থাকে। এসময়, সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মিছিলকারীদের গায়ের উপর কতিপয় সদ্যদের দ্বারা মোটরসাইকেল উঠানোর চেষ্টাও চালানো হয়।
উল্লেখ্য, দৃকের এই কর্মসূচী হওয়ার কথা ছিল শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তায় বিকাল ৪টায়। কিন্তু সেখানে হঠাৎ করে দুপুর ২টা থেকে ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচারের দাবীতে শত শত সরকারদলীয় লোকের কর্মসূচী শুরু হয়। তারা এবং কয়েকশত পুলিশ মিলে পুরো শাহবাগ অঞ্চল দখল করে রাখে। এমতাবস্থায় দৃকের পূর্বঘোষিত কর্মসূচীর স্থান তাৎক্ষনিকভাবে বদল করে রাজু ভাস্কর্যের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যখন শিল্পীরা কর্মসূচীর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখনো দফায় দফায় নানাভাবে তাঁরা হয়রানির শিকার হন, কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য পরিচয়ে, কখনো বা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয়ে নানাজন নানাভাবে এসে কর্মসূচী না করার জন্য হুমকি ধামকি দেন এবং ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে।
এই পুরো ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমরা সরকারকে প্রশ্ন করতে চাই যে, সরকার কি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পক্ষে এবং সংবিধান স্বীকৃত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এবং সাংস্কৃতিক মত প্রকাশের বিরুদ্ধে? যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে সংবিধানের বরখেলাপ করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ওঁ মত প্রকাশের কর্মসূচীতে এই সর্বাত্মকভাবে বাধা প্রদানের চেষ্টা কেন হলো এবং কার এবং কাঁদের নির্দেশে এমন হলো? পুলিশ কেন তার যথাযথ এবং প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলেন, যখন তাঁদের প্রাক্তন এবং বর্তমান অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার হরণের অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারমাধ্যমে উঠছে এবং এসেছে? সরকারদলীয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মানিক মূলত রাষ্ট্রের জনগণের কর্মচারী, কিন্তু জনগণের কর্মচারী হয়ে তিনি করে বললেন যে- “২১শে আগস্টে গ্রেনেড হামলার বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়া ও অন্য বিচার চাওয়া যাবে না”– এটাই কি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সরকারের এবং অন্যান্য সরকারী কর্মচারীদেরও অবস্থান? আমরা জানতে চাই।
শুধু তাই নয় আমরা এও মনে করি যে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে করা শান্তিপূর্ণ শৈল্পিক প্রতিবাদ কর্মসূচীকে ভন্ডুল করার উদ্দেশ্যে, যেভাবে ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো মর্মান্তিক একটা ঘটনাকে ব্যবহার করা হলো, তাতে ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত, আহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিও চরম অসম্মান এবং অবমাননা প্রদর্শন সরকার দলীয় সদস্যরা নিজেরাই করলেন।
নাগরিকদের পক্ষে স্বাক্ষরকারীরা হলেনঃ
১। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (পিএইচডি), ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
২। ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি।
৩। হামিদা হোসেন (পিএইচডি), মানবাধিকার কর্মী এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ।
৪। আনু মুহাম্মদ, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
৫। পারভীন হাসান (পিএইচডি), অধ্যাপক এবং ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি
৬। আলী রীয়াজ (পিএইচডি), অধ্যাপক, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র।
৭। শাহীন আনাম, প্রধান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ।
৮। শিরীন হক, নারী অধিকার কর্মী।
৯। সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, সুপ্রীম কোর্ট,
১০। ইফতেখারুজ্জামান (পিএইচডি), নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
১১। স্বপন আদনান (পিএইচডি), অধ্যাপক, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন।
১২। বদিউল মজুমদার (পিএইচডি), সংগঠক এবং প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, সুজন।
১৩। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অ্যাক্টিভিস্ট আইনজীবী এবং পরিবেশ অধিকারকর্মী।
১৪। দীনা এম সিদ্দিকী (পিএইচডি), অধ্যাপক, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র।
১৫। ফেরদৌস আজিম (পিএইচডি), অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
১৬। সি আর আবরার (পিএইচডি), অধ্যাপক (অবঃ), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৭। মেঘনা গুহ ঠাকুরতা (পিএইচডি), অধ্যাপক এবং সাবেক সদস্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
১৮। খুশি কবীর, মানবাধিকার কর্মী।
১৯। ফরিদা আখতার, নারী অধিকার কর্মী।
২০। আজফার হোসেন (পিএইচডি), অধ্যাপক, গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেইট ইউনিভার্সিটি, মিশিগান যুক্তরাষ্ট্র ।
২১। শাহনাজ হুদা (পিএইচডি), অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
২২। সারা হোসেন, (বার-এট-ল), আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
২৩। আদিলুর রহমান খান, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
২৪। নাফিসা তানজীম, সহকারী অধ্যাপক, জেন্ডার, রেস অ্যান্ড সেক্সুয়্যালিটি স্টাডিজ ও গ্লোবাল স্টাডিজ,
লেযলি ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র।
২৫। মো: নূর খান, মানবাধিকার কর্মী।
২৬। নাসিরুদ্দিন এলান, মানবাধিকার কর্মী।
২৭। রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
২৮। গীতি আরা নাসরীন (পিএইচডি), অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
২৯। সৌভিক রেজা, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
৩০। সাঈদ ফেরদৌস (পিএইচডি), শিক্ষক , জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
৩১। মাহমুদুল সুমন(পিএইচডি), অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
৩২। মাসউদ ইমরান মান্নু, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
৩৩। ওমর তারেক চৌধুরী, লেখক ও অনুবাদক।
৩৪। মীর্জা তাসলিমা সুলতানা (পিএইচডি), শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৩৫। তানজিম ওয়াহাব, শিক্ষক, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট।
৩৬। নাসরীন খন্দকার (পিএইচডি), শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৩৭। সাদাফ নূর-এ ইসলাম (পিএইচডি), শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
৩৮। রুশাদ ফরিদী (পিএইচডি), অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৩৯। মোবাশ্বার হাসান (পিএইচডি), লেখক ও গবেষক।
৪০। আ-আল মামুন, শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
৪১। মাইদুল ইসলাম, শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
৪২। হানা শামস আহমেদ, পি এইচ ডি গবেষক, ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা।
৪৩। কামরুন নাহার, মানবাধিকার কর্মী।
৪৪। পারসা এস সাজিদ, শিক্ষক, এবং গবেষক।
৪৫। মুনেম ওয়াসিফ, শিল্পী
৪৬। ঋতু সাত্তার, শিল্পী
৪৭। বর্ণালী সাহা, লেখক। মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া।
৪৮। অরূপ রাহী, সঙ্গীতশিল্পী , লেখক।
৪৯। খন্দকার তানভীর মুরাদ, আলোকচিত্রি
৫০। বীথি ঘোষ, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, সমগীত।
৫১। অমল আকাশ, শিল্পী ও সংগঠক, সমগীত।
৫২। জান্নাতুল মাওয়া, আলোকচিত্রী
৫৩। রুহি নাজ, গবেষক এবং অধিকার কর্মী।
৫৪। খাদিজা মিতু, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
৫৫। রোজীনা বেগম,গবেষক।
৫৬। কাজী ওমর ফয়সাল, শিক্ষক ও গবেষক।
৫৭। আবদুল্লাহ আল নোমান, অ্যাক্টিভিস্ট আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
৫৮। জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অ্যাক্টিভিস্ট আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
৫৯। হাসনাত কাইউম, অ্যাক্টিভিস্ট আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
৬০। রেজাউর রহমান লেনিন, গবেষক এবং অধিকার কর্মী।
-প্রেস বিজ্ঞপ্তি।