আল মাহমুদ (১১ জুলাই ১৯৩৬ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)
বাংলা কবিতায় অমরত্ব পাওয়া অন্যতম কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালী কাবিন’। লেখালেখি ও জীবনের নানান বাঁকে আল মাহমুদকে নানান সময়ে এই কাব্যগ্রন্থের সনেট নিয়ে কথা বলতে হয়েছে। একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, একটানে ১৪টি সনেটে লিখেছিলেন।
আল মাহমুদ বলেন, “সোনালি কাবিন’ যখন আমি লিখি তখন আমি চট্টগ্রামে ছিলাম। অভাব-দারিদ্র্যের মধ্যেই ছিলাম। গোর্খা ডাক্তার লেন বলে জেলেপাড়ার দিকে একটা জায়গা আছে, সেখানে থাকতাম। ইকবাল ম্যানসন বলে একটা বিল্ডিংয়ের চারতলায় থাকতাম। আমার পাশে থাকতেন শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব। চট্টগ্রামের লোকগায়ক। হঠাৎ ‘সোনালি কাবিন’ লিখি সে সময়। হয়তো একটা মেয়েকে দেখেই লিখেছি বা তাকে উদ্দেশ্য করেই লিখেছি। কিন্তু সেটা তো বড় কথা নয়। কোনো বিশেষ নারী এটার জন্য বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, এই ছন্দভঙ্গিটা। একটানে ১৪টা সনেটে এসে আমি শেষ করে দিলাম। এগুলো আকস্মিক ঘটনা।”
আল মাহমুদের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালি কাবিন’ প্রকাশ হয় ১৯৭৩ সালে। এ সম্পর্কে একই সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, “অনেক সময় বলে না যে, কবিরা বিশেষ কোনো ভরের থেকে এই কাজটা করে। এ রকমই মনে হয় আমার কাছে। কিন্তু, ভর তো না, নিশ্চয় আমার ভেতর প্রস্তুতিটা ছিল। গবেষণাটা ছিল। লেখাপড়া না জানলে, ইতিহাস না জানলে এটা সম্ভব হতো না। বাংলাদেশের আদি ইতিহাস সম্পর্কে আমার বেশ উৎসাহ ছিল, পড়াশোনা ছিল। বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ নিয়ে আমার দারুণ আগ্রহ ছিল। যখন ছোট ছিলাম তখন আমি একজন আর্কিওলজিস্ট হতে চেয়েছিলাম। প্রত্নতাত্ত্বিক হতে চেয়েছিলাম, হয়েছি কবি। এ জন্য এ বিষয়টা আমার কাব্যে খুব এসেছে।”
সনেট পঞ্চকের সময় কী ঘটেছিল? এর উত্তরে আল মাহমুদ বলেন, “সনেট পঞ্চক তো অ্যাকচুয়ালি ঐতিহ্যবাহী কবিতা। খনা একজন প্রাচীন কবি। আমাদের দেশে জন্মেছিলেন। বলা হয় যে, তিনি বাঙালি ছিলেন। আবহাওয়া দেখে বা বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে কৃষিকাজের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করতেন তিনি। প্রকৃতির কবি। যদি ঝড়ে ফাগুনে, রাজা যায় মাগনে- এসব বিষয় এসেছে খনার কবিতা থেকে। এর প্রতি আমার মুগ্ধতা তৈরি হয়েছিল। সে মুগ্ধতা থেকে আমি খনার সনেটগুলো লিখেছিলাম। এগুলো যে এতো ভালো হবে আমি তখন বুঝতে পারিনি।”
আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম এই প্রধান কবির ৮৪তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। করোনা পরিস্থিতিতে তার জন্মদিন ঘিরে তেমন কোনো আয়োজন নেই। তবে কবিকে নানাভাবে স্মরণ করবে তার ভক্ত অনুরাগীরা।
‘সোনালি কাবিন’-এর কবি আল মাহমুদ ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাক্ভঙ্গিতে সমৃদ্ধ করেছেন।
একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা সময়ে নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন কবি। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে লোক লোকান্তর, কালের কলস, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, আরব্য রজনীর রাজহাঁস ও বখতিয়ারের ঘোড়া।
নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন তিনি।