গ্রন্থণা: সুরাইয়া নাজনীন
উই এর ফেসবুক পেজে স্ক্রল করতে করতে চোখ আটকে গেল।নিবিড় মনোযোগে একেঁ যাচ্ছে অবলিলায়। ও পশলা। বিশেষ বুদ্ধি সম্পন্ন একজন কিশোরী। কি দারুণ তার হাতের কাজ। ২০১৭ সালে অটিজম জয়ী সফল ব্যক্তি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননাও পেয়েছেন। পশলার একাগ্রতা, বুদ্ধিদিপ্ত চিন্তার বারতা একদিন নিশ্চয় আকাশছুঁবে। তার সৃজনশীল মনের দেয়াল ভাঙতে অক্লান্ত পরিশ্রম এবং পাশে থেকে সবসময় সহযোগিতা করছেন তার মা। আজ গল্প হবে পশলাকে নিয়ে
আকাঁআকিঁর প্রতি ভালো লাগা কবে থেকে। কি দিয়ে শুরু করা হয়েছিল?
কথা বলতে পারার আগে থেকে। মা অফিসে চলে গেলে মাকে আঁকা। শিশু মনের অব্যক্ত অনুভূতি, বললেন পশলা।
কি আঁকতে বেশি ভালো লাগে?
সেই সব ছবি যেগুলোতে চরিত্র আছে এবং চরিত্র গুলোর কাহিনী আছে। নির্ভেজাল দৃশ্য আঁকতে কোন আনন্দ পাইনা আমি। সেখানে জীবনযাত্রা থাকতে হবে, বিশেষ আলাদা একটা চরিত্র থাকে। কার্টুন, শিশু কিশোর, জীবনের উচ্ছলতা, শ্রেণী ভেদাভেদ এগুলোই আমার পছন্দের। প্রতিটি ছবির চরিত্রে পোশাক একটা বিশেষ অলংকরণ ।
ভালো লাগা ছবিগুলো ব্যাখ্যা দিলেন তিনি-
ফ্যাশন নাইট – একটা ফ্যাশন শো যেখানে নানান জন নানান রং এর পোশাকে সজ্জিত।

– যেখানে শ্রেণী বৈষম্য দারুন ভাবে ফুটে উঠেছে, গরীব ছেলেটা ফুটপাতে ঘুমিয়ে আছে,

ঝাঁপাঝাঁপি – জলাশয়ে অনেক দুষ্টু বাচ্চারা মজাকরে গোসল করছে, সবচাইতে দুষ্টু টা গাছের ডালে ঝুলে পানিতে ঝাঁপ দিচ্ছে।

বন্ধুদের আড্ডা – অনেকগুলো ছেলে মেয়ে নানান ঢং এ নানান রং এর পোশাক পরে আড্ডা দিচ্ছে। কেউ বসে, কেউ আধশোয়া, কেউ কারো ঘাড়ে হাত রেখে আড্ডা দিচ্ছে।
কে বেশি অনুপ্রেরণা যোগায়?
আমার মা।
বর্তমানে কিভাবে কাজ করছেন?
পশলা ক্রিয়েশন নামে একটা অনলাইন পেজ আছে। এই পেজ থেকে পোশাক ডিজাইন, আঁকা, হ্যান্ডপেইন্ট, হ্যান্ড স্টিচ এর কাজ করা হয়। পোশাকের মধ্যে- হ্যান্ডপেইন্ট শাড়ী, টি শার্ট।
কুর্তিগুলো আমি নিজে ডিজাইন করে থাকি। তারপর টেইলরিং করে নিয়ে আবার নিজেই হ্যান্ড পেইন্ট হ্যান্ড স্টিচ করি ।নবজাতকের পোশাক- নিমা, ন্যাপি, কাঁথা একেবারেই নিজস্ব । একেবারেই আলাদা। তাছাড়া খুব পছন্দের গিফট কার্ড।
এক কথায় আর্ট এন্ড ক্রাফট।
এটাকেই কি পেশা হিসেবে নিয়েছেন নাকি শখের বসে?
শখ না ভালো লাগা, পছন্দের কাজ। নিজেকে গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত রাখা। দক্ষতা কে বাস্তবে রূপ দেয়া। প্রতিটি মানুষেরই একটা নিজস্ব পরিচয় থাকা প্রয়োজন। এমন একটা কিছু থাকা দরকার যার জন্য সে সমাজে সম্মানিত হয়, মূল্য থাকে। সাধারণ মানুষ কোন উপার্জনক্ষম বা পেশাজীবী না হলে সমাজে বা পরিবারে তেমন মূল্য থাকেনা। আর যখন কেউ কোন সীমাবদ্ধতা বা অক্ষমতা নিয়ে জন্মায় তখন তো কথায় নাই। তার জন্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া, কর্মময় জীবন একান্ত জরুরী। আর যখন প্রতিভা আছে তখন কেন অবহেলিত জীবন হবে? অবশ্যই একটি স্বাবলম্বী জীবন। তাই এ প্রচেষ্টা।

২০১৭ সালে অটিজম জয়ী সফল ব্যক্তি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্মাননা প্রাপ্ত হয়েছেন। এই সম্পর্কে কিছু বলুন
সম্মাননা প্রাপ্তি সব সময়ই ভীষণ আনন্দের। আর যখন সেটা জন্মগত সীমাবদ্ধতা কে জয় করে সফলতা অর্জনের জন্য রাষ্ট্রপ্রধানের দেয়া তখন সেটা সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস, উদ্দীপনা। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ়তা। শুধু প্রয়োজন সামাজিক সহযোগিতা।