জীবন ও সাহিত্য

আহমেদ সুমন:

দুঃখ – দারিদ্র্যতা, আনন্দ, হাসি-কান্না মানুষের জীবনে প্রতিনিয়ত আসবেই। এটি সৃষ্টিকর্তার এক অপূর্ব লীলা খেলা। তবে জীবনের এই রঙ্গমঞ্চ চিরকাল স্থায়ী থাকে না। একটির পর আরেকটি ক্রমাগত আসতে থাকে।আর এই দুঃখ- কষ্ট, হাসি-কান্নার সঙ্গী হয়েই জীবন অতিবাহিত করতে হয়। সুন্দর এই পৃথিবীতে আমরা কেউ চিরকাল বেঁচে থাকবো না।একদিন সব কিছু ছেড়ে পাড়ি জমাতে হবে অসীম দিগন্তে, না ফেরার দেশে।

জীবনের এই ক্ষুদ্র সময়কে ব্যাপকতায় পরিনত করে, অমর হয়ে থাকার পিছনে সাহিত্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সাহিত্যের মাধ্যমে একজন লেখক যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকতে পারেন তাঁর পাঠক মহলের হৃদয়ে।
এই বিশ্বে যাঁরা আজ স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন তাঁদের অনেকই ছিলেন সাহিত্যিক।সাহিত্যের মাধ্যমে তাঁরা তাদের জ্ঞান, বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা মানুষের কাছে বিলিয়ে দিয়েছেন।
এই পৃথিবীকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছেন। আমরা আজো শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি শেক্সপিয়ার, শেলী, ইলিয়ট প্রমুখ জনপ্রিয় সাহিত্যিকগণদের। যাঁরা তাদের সাহিত্যের মাধ্যমে সাম্য, মনুষ্যত্ব, প্রেমের সৌন্দর্য বর্ণনা করে গিয়েছেন। যাঁরা পৃথিবীকে একটি সোনালী ভোরের উপহার দিয়ে গিয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে এই পৃথিবী আজ এতো সমৃদ্ধ। দুঃখ দারিদ্র্যতাকে পেছনে ফেলে তাঁরা হয়ে উঠেছিলেন বরণীয়। আজো মনে হয় তাঁরা বেঁচে আছেন। যেন মৃত প্রাণে আলোর জাগরণ!

সাহিত্য এমন একটি মাধ্যম, যেখানে মানব জীবনের বৈচিত্র্যময়তা দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। এতে পাওয়া যায় গ্রাম বাংলা এবং শহরের আনাচে- কানাচে ঘটে যাওয়া হাজারো বাস্তব চিত্র। যদিও, একজন লেখক তাঁর লেখনীর মধ্যে তাঁর নিজস্ব কাল্পনিক জগতের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন।তবে, এটা নিশ্চিত যে তিনি তাঁর চারপাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোই কাল্পনিক জগতে গিয়ে উপস্থাপন করেন।

সাহিত্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা যায় মানুষের ভিতরে লুকিয়ে থাকা আশা-প্রত্যাশা, সুখ-দুঃখ যা মানুষের মনকে গতিশীল করে তোলে।সাহিত্যের মাধ্যমে আমরা কোন একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে সক্ষম হই। একমাত্র সাহিত্যই পারে একটি দেশকে বিশ্বের দরবারে উচ্চতর মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে।

সাহিত্য রচনা করার আগে একজন ব্যক্তিকে হতে হবে উদার মনের অধিকারী। যত বাঁধা- বিপত্তি আসুক সব কিছু পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ভাবতে হবে জীবনে অনেক বড় হবো। মনের মাঝে বিশ্বাস রাখতে হবে। প্রতিজ্ঞা রাখতে হবে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর।
কাজী নজরুল ইসলাম, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ দুঃখ – দারিদ্র্যতার মধ্যে দিয়েও তাদের প্রতিভাকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন।
শত ঝড়ে ও তাঁরা থেমে থাকেননি। আমাদেরকেও তেমনি দূরন্ত ষাঁড়ের মত চলতে হবে। সাহিত্যের আলোয় আলোকিত করতে হবে এই বিশ্বকে।

ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন :