‘এদেশে সৃজনশীল কাজের মূল্যায়ন কম’

সুরাইয়া নাজনীন:

মেধা নিয়েই প্রত্যেকটি মানুষ পৃথিবীর আলো দেখে। তবে সেই মেধা খরচ করবার ধরন সবার আলাদা। কেউ একান্ত নিজের জন্যই জীবনটাকে শপে দেই আবার কেউ নিজের মেধা অন্যের মাঝে বিলিয়ে দেশের সম্পদ তৈরি হয়। এখন সময় বদলেছে। আগে পুরুষদের ঘরের কিংবা দেশের সম্পদ ভাবা হতো এখন আর তা নেই। উন্নয়নশীল দেশে নারীর অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। আকাশছোঁয়া নারীর সাহসী কর্মকান্ডের ভূমিকা সবসময় দেখিয়েছে। আজ কথা হবে আমিনা আতকিয়া রিতাকে নিয়ে, যে কিনা শিক্ষা জীবন থেকেই অর্থ উপার্জনের বাস্তব স্বপ্ন দেখছেন। প্রবল ইচ্ছা, সততা, মেধা-মনন কাজে লাগিয়ে। আকাশছোঁয়া সেইসব প্রান্তিক গল্প বলে যায় যা জীবন গড়ার কাজে অগ্রনী ভূমিকা রাখে।

শুরু কিভাবে ?
আমি ছোট থেকেই চিন্তা করতাম পথশিশু নিয়ে। ওরা কেন আমাদের মতো জীবন পাচ্ছে না। ওরাও তো পেতে পারে আমাদের মতো স্বাভাবিক জীবন।
সেই ভাবনা থেকেই ২০১৫ সালে খুব সীমিতভাবে কাজ করা শুরু করি। আমি স্টুডেন্ট তাই কাজ এগিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছিলো। এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় কাজ গুলো।  ২০২০ সালে এসে দেখা মিলে women and e- commerce foram (we) গ্রুপের। এই গ্রুপ কাজ করে দেশিয় পন্য ও নারী উদ্যোক্তা নিয়ে। আমার ভালো লাগে গ্রুপের কাজ গুলো। বাংলাদেশ কে ভালোবেসে বাংলাকে প্রায়োরিটি দিয়ে গ্রুপ এটাই প্রথম পেয়েছি আমি। শিখতে থাকি উই গ্রুপ থেকে।
আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি কাজ করছি কাঠের গহনা তৈরির মেটেরিয়াল নিয়ে, পথশিশুদের নিয়ে কাজ টাও অল্প অল্প করে চলছে এখন।

আমিনা আতকিয়া রিতার তৈরি কাঠের গয়না

 

ক্রিয়েশনের মূল্যায়ন কি পাওয়া যায়?
ক্রিয়েটিভিটি জিনিসটাই আসলে অন্যরকম। ক্রিয়েশনের মূল্য সব জায়গায়ই আছে, তবে সঠিক মূল্যায়নের অভাবে দাম পাচ্ছে না। অনেকের অনেক ক্রিয়েটিভিটি আছে, হয়তো তারা জানে না শুরুটা কিভাবে করবে না হয় সার্পোট পায় না। অনেকেই একা কিছু করতে সাহস পায় না, কিন্তু তারা একটু সাপোর্ট পেলেই ঘুরে দাড়াবে, পারবে তার ক্রিয়েশনের মূল্যায়ন কতটুকু জানিয়ে দিতে। তাই এটা নিয়ে আমাদের আরও ভাবা উচিত।

এদেশে দেশিয় পণ্যের গ্রহনযোগ্যতা কেমন?
একদম ভালো পণ্য মানেই আমরা বিদেশি পণ্যকে ভাবতাম। বর্তমানে সেই ধারণা কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে। কারণ আমরা দেশিয় পণ্যের পরিচিতি করাতে পারছি।

নারী উদ্যক্তার লড়াই নিয়ে কিছু বলুন
প্রথমত আমি একজন উদ্যক্তা। নারী / পুরুষ কোন বিষয় না। তবুও কিছু বাধা আমাদের পেতে হয়, লড়াই করেই বাঁচতে হয়।
প্রথম দিকে আমি হাসির পাএ ছিলাম। আজ আমি আমার কাজ দিয়ে তার মূল্যায়ন করছি।
আমি যখন একজন ক্রাফটারের মুখে শুনি আপু আমি কাজ শুরু করবো তোমার জিনিস দিয়ে, দোয়া করো নিজের পায়ে দাঁড়াবো। আমার লড়াইয়ের কথা ভুলে যাই। আমরা তো কাজই করি এক বুক শান্তি ও প্রাণ খোলা হাসির জন্য।

তরুণ উদ্যক্তা হতে হলে কোন বিষয় গুলি গুরুত্ব দিতে হবে?
প্রথমেই ভাবতে হবে, কোন কাজ নিয়ে আমার ধারণা কতটুকু, আমার সোর্স কি, সার্পোট কতটা, কতটা ব্র্যান্ডিং আমি করাতে পারবো। কতটা ভালো লাগে আমার এই কাজটা করতে। কারণ প্রতিটি পণ্য চলে তার ব্র্যান্ডিং ও কাজের ভালোবাসার উপর ভিত্তি করে।

গুচ্ছ মেলার গুরুত্ব কেমন?
প্রতিটি মেলাতে নিজস্ব পণ্যের তার পরিচিতি পায়। প্রতিটি গুচ্ছ মেলা থেকে অনেক কিছু শেখার থাকে। যেমন, একই রকম পন্য মেলায় থাকবে। এতে বুঝতে পারবো কার পণ্য কত আকর্ষনীয়, আরও কিভাবে ইমপ্রুভ করা যায়। সাথে পণ্যের ব্র্যান্ডিংও হচ্ছে।

পারিবারিক সহযোগিতার প্রয়োজন কতখানি?
বর্তমান যুগের সাথে আমাদের গার্ডিয়ানরা এতোটা পরিচিত না। তাই আমরা সাপোর্ট ও কম পাই। আমাদের আগে পরিবারকে বুঝাতে হবে আমি কি করছি। পরিবার বুঝে গেলে ইনশাআল্লাহ বেষ্ট সাপোর্ট পাওয়া যায়।

চাকরি/ব্যাবসা কোনটির মূল্যায়ণ বেশি আপনার কাছে
এটা নির্ভর করে যার যার স্বাধীনতার উপর। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ব্যবসাকে প্রাধান্য দিবো। কারণ পড়াশোনা শেষ করে ভালো জব পেতে আমাদের নরমালি ২৮-৩০ বছর হয়ে যায়। অন্যদিকে আমি আমার ক্রিয়েটিভি কাজে লাগিয়ে তার থেকে কম দিনে নিজের একটি পজিশন তৈরি করে নিতে পারবো এবং আরও তিনজন মানুষ কাজ করার সুযোগ পাবে আমার মাধ্যমে।

শেয়ার করুন :