একজন নারী উদ্যক্তার গল্প

সুরাইয়া নাজনীন: নারীর জন্য কাজের পরিধি বেশ ছোট। সেটা হোক কর্মক্ষেত্রে কিংবা চিন্তাধারায়। তবে নারী থেমে নেই। ঘরে বসেও করছে সৃজনশীলকর্মকান্ড। শত কাজের মাঝেও তৈরি করছে নিজ নিজ প্লাটফর্ম। এগুলো দেখে উৎসাহ পাচ্ছে, সাহস পাচ্ছে তৃনমূল নারীরা। আজ গল্প হবে তাসনুবা শেহরীনকে নিয়ে। তিনি একজন নারী উদ্যক্তা। তিনি তার উদ্যক্তা হয়ে ওঠার গল্প বলেছেন আকাশছোঁয়ার কাছে।

আকাশছোঁয়া: আপনার শুরুটা কিভাবে?

তাসনুবা শেহরীন: আমার তখন মাস্টার্সের রেজাল্ট আউট হয়েছে, ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি, মনে অনেক আনন্দ আমার পরিশ্রম আজ সফলতার মুখ দেখেছে। তখন বাসার সবাই মা- বাবা, আমার শশুর এমনকি আমার স্বামী বললেন এখন থেকে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে, কিন্তু আমি ভাবছি আমার ৪ বছরের ছোট্ট মেয়েটাকে রেখে কি ভাবে অফিস করবো, সাপোর্ট দেওয়ার মতো তো কেউ নেই ,, “না আমি চাকরি করবনা, তবে হাত পা গুটিয়ে বসেও থাকবনা” নিজেকেই বললাম,, তখন থেকেই মনের মধ্যে এই আশা, স্বামীও বললেন তুমি উদ্যক্তা হও।
হীনমন্যতা কাজ করতো যে আমি কিছুই করিনা এই ভেবে। এর পর আরো ১.৫ বছর কেটে গেছে, এর মাঝে অনেক ঝড় বয়ে গেছে জীবনে, শরীর মনে আজো সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি।
একদম বিদ্ধস্ত অবস্থায় আবার উঠে দাড়ালাম, সেই সময় গুলোতে সময় কাটানোর জন্য ইউটিউবে নানান ভিডিও দেখে পুরনো কাপড়ে সেলাইয়ের কাজ করতাম, আস্তে আস্তে নেশায় পেয়ে বসল যেন, খেয়াল করলাম কাজে ডুবে থাকলেই আমি ভালো থাকি, ভুলে থাকি। মেয়ের স্কুলের এক ভাবির কাছ থেকে শোরুমের ড্রেসের উপর হাতের কাজ করে দিতে চুক্তিবদ্ধ হলাম, এরপর আরো অনেকটা সময় কেটে গেল, শখের বশে নিজের ও মেয়ের জামায় কাজ করতে লাগলাম। সবই ইউটিউব দেখে, কারণ ছোট মেয়ে আর ২ মাসের আর একটা ছোট অসুস্থ বেবি নিয়ে কোথাও ট্রেনিং নেওয়া সম্ভব ছিল না,, কয়েক দিন পর এক ভাতিজি এলো গ্রাম থেকে, ওর কাছে দুই বাচ্চা রেখে পাশের এক সেন্টারে সেলাই শিখতে যেতাম, এভাবেই শুরু। তারপর বিভিন্ন জায়গায় মেলা ঘুরে ফিরে দেখতাম আইডিয়া নিতাম, কোথায় কি পাওয়া যায় খোঁজ নিতাম, কিছু পণ্য বাইরে থেকেও নিয়েছি। সর্বপ্রথম ৫০০০/- টাকা দিয়ে শুরু করেছি।

 


আকাশছোঁয়া: সৃজনশীল কাজের মূল্যায়ন কতোটা পান?
তাসনুবা শেহরীন: আজ থেকে ১২-১৩ বছর আগে ক্রিয়েটিভিটির মূল্য তেমন ছিল না। ছবি আঁকা, সেলাই করা এগুলো কারো এম্বিশন হলে তাকে সবাই পাগল ভাবত, বাবা মা ভাবতো ছেলে/ মেয়ে উচছন্নে গেছে, আমি নিজেও এর শিকার, আমি ছবি আঁকতে খুব ভালোবাসি, তাই চারুকলায় পড়তে চেয়েছিলাম কিন্তু পরিবার থেকে অনেক বাধা নিষেধের সম্মুখীন হতে হয়। তবে এখন দিন বদলেছে, এখন আর মানুষ জামানার পরোয়া করেনা, নিজের অন্তরের আওয়াজটাকেই প্রাধান্য দেয়।

আকাশছোঁয়া: দেশি পণ্যের চাহিদা কেমন?
তাসনুবা শেহরীন: কোন একটা সময় কোন উংসব / পার্বণে আমরা সবাইকে বাজারে গিয়ে বিদেশি পণ্য খুজতাম, এদেশের বাজার যেন তারা একচেটিয়া ভাবে সব দখল করে নিয়েছিল, তবে এখন মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক একটিভ, হোক সে ক্রেতা/ বিক্রেতা তাই সে সহজেই দেশি-বিদেশি পণ্যের মধ্যে পার্থক্য করতে পারছে, গুণাবলী যাচাই করতে পারছে সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয় দেশি পণ্যের প্রতি মানুষ আবার নতুন করে আগ্রহী হচ্ছে, বিক্রেতারা যদি পণ্যের মান ঠিক রাখে তাহলে এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস।

আকাশছোঁয়া: একজন নারীর জন্য টিকে থাকার লড়াই ঠিক কেমন?
তাসনুবা শেহরীন: প্রতিটি উদ্দোক্তা কেই টিকে থাকতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হয়, আর নারীদের জন্য তা আরো কঠিন। ঘরের কাজ সামলে নিজে শখ আর স্বপ্ন পূরণে কাজ করতে হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সহযোগিতার বদলে ভর্ৎসনা শুনতে হয়, তবে সৎ সাহস আর ভালো কাজের জেদ থাকলে সবই সম্ভব।

আকাশছোঁয়া: তরুণদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন
তাসনুবা শেহরীন: তরুণরা তাদের স্বভাবজাত উদ্যম, স্পৃহা, উৎসাহ, একাগ্রতা, সততা আর পরিশ্রম দিয়ে খুব সহজেই সফল হতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।

আকাশছোঁয়া: একজন উদ্যক্তাকে গুচ্ছ মেলা কতটুকু সাহায্য করে?
তাসনুবা শেহরীন: গুচ্ছমেলা খুবই ভালো একটি প্রচেষ্টা, এক্ষেত্রে একই জায়গায় অনেক ক্রেতা – বিক্রেতার সমাগম হয় তাই খুব সহজেই ফেস টু ফেস ইন্টার একশন হয় যেটা অনলাইনে সম্ভব না। তবে মেলায় সিট পেতে যে পরিমাণ টাকা লাগে এতে উদ্যক্তাকে পণ্যের দামে সরাসরি প্রভাব ফেলে এই প্রক্রিয়াটি সহজ করলে ক্রেতা – বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হবে।

 

আকাশছোঁয়া: পারিবারিক সহযোগিতা কতটুকু জরুরী?
তাসনুবা শেহরীন: একজন নারী উদ্দোক্তার উপর পরিবারের ভূমিকা অনেক, পরিবারের সদস্যরা যদি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের না হন, সহযোগিতা না করেন এমনও হতে পারে সে মাঝ পথে এসে মনোবল হারিয়ে ফেলে সব বন্য করে দেয়।

শেয়ার করুন :