কল্পনার ক্যানভাসে স্বপ্ন পুরন

গ্রন্থণা- সুরাইয়া নাজনীন

নিজের পায়ে দাঁড়াবার ইচ্ছাটা সেই ছোটবেলা থেকে। হৃদয়ে শিল্পের ক্যানভাস আকিঁবুকি করে চলেছে অজান্তেই। কিন্তু আলোর বিচ্ছুরন ঠিক আভা পাচ্ছে না। মনের ভিতর নাড়া লাগে যখন স্কুলে ড্রইং করতে অন্যের সাহায্য চাইলে, বিরক্ত হতো সহপাঠীরা। সেই জিদ থেকে রঙের নিয়ন্ত্রণ শুরু। তিনি নুসরাত জাহান। তার সাদা ক্যানভাস এখন মূর্ত বা বিমূর্ত রুপে রঙিন হয়ে উঠছে। সাবলম্বী হতে চলেছেন রং তুলিতে।

“স্বপ্ন সে তোহ হঠাৎ করে ঘুম ভাঙ্গায়
তবে স্বপ্ন বুনন রং-তুলিতে মন রাঙায়”

সমুদ্র চা

আওড়ানো চরনগুলোই তার কাজ। তিনি স্বপ্ন বুনছেন রং তুলিতে। নুসরাত জাহান এমবিএ করছেন ইডেন মহিলা কলেজ থেকে। পড়াশুনার সম্পূর্ণটাই ব্যবসায় শিক্ষায়। কিন্তু ছবি আঁকার নেশা ছোটবেলা থেকেই। বিভিন্ন উৎসবে অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে রং ছিল তার প্রথম পছন্দ। বিভিন্ন ক্রাফটিংও করেছেন তিনি তবে রং এর ব্যবহার থাকতো সব জায়গাতেই।

নুসরাত জাহান বলেন, ‌’করোনাকালীন সময় নিজের অবসর কাটাতে কিছু ছবি আঁকলাম। হঠাৎ মনে হলো ছবি আঁকার একটা পেইজ খুলি। নিজের একটা পরিচয় থাকা দরকার। শুভরাজ (আমার অর্ধাঙ্গ) ভীষন ভাবে উৎসাহ দিল। যেহেতু শখের বসেই পেইজটা খুলবো। আর পন্যটাও সৌখিন। তাই দুজনে মিলে নাম ঠিক করলাম “সৌখিন ছবিঘর”।

কাজের শুরু নিয়ে তিনি আরও বলেন, ১৪ ই মে শুরু হলো “সৌখিন ছবিঘর” এর পথচলা। নিজের ঘরের দেয়ালের কিছু পেইন্টিং দিয়ে শুভসূচনা হলো। পরিবার, বন্ধু আর পরিচিত শুভাকাঙ্ক্ষী সবার বেশ সাপোর্ট পাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে আরেক বড় বোন প্রিমা তাসনিম যে নিজেও একজন পেইন্টার তার মাধ্যমে Women and e-Commerce forum (WE) নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হলাম। যার নামের সাথে সাথেই চলে আসে সম্মানিত রাজীব আহমেদ স্যার ও নাসিমা আক্তার নিশা আপুর কথা। তাদের এই গ্রুপ আমার কাছে এক অনবদ্য কৃতজ্ঞতার স্থান।

রোদ সড়ক

অনুপ্রেরণার জায়গা নিয়ে নুসরাত জাহান বলেন, ‘নিজের পড়াশুনার জ্ঞান, উই থেকে পাওয়া রাজীব স্যারের উদ্যোক্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন টাস্ক আর প্রিমা আপুর সার্বক্ষনিক পরামর্শ সেই সাথে শুভরাজের ২৪ ঘন্টা সহযোগিতা, সব মিলিয়ে আজ আমার “সৌখিন ছবিঘর” আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।’

তার পেইজ ‘সৌখিন ছবিঘর’ নিয়ে তিনি আরও বলেন, এখানে প্রায় সব ধরনের পেইন্টিং পাওয়া যায় কেননা আমি কাস্টমাইজড কাজ করতে পছন্দ করি। পেইন্টিং এর সরঞ্জাম যোগাড় করতে বর্তমান পরিস্থিতিতে দূরে যাওয়া সম্ভব নয় বিধায় বাসার কাছের স্টেশনারি দোকান কিংবা অনলাইনই আমার ভরসা। ক্রেতার পছন্দ, রুচি, চাহিদা আর ক্রয়সীমা বিভিন্ন বিষয় ভেবে কাজ করছি বলে সাড়াও পাচ্ছি বেশ।

রংয়ের বিশ্লেষণ নিয়ে কথা হলো নুসরাত জাহানের সঙ্গে, তিনি বলেন, এবস্ট্রাকট আর্ট থেকে শুরু করে কন্সেপ্টচুয়াল আর্ট, হাইপাররিয়েলিজম আর্ট, ইম্প্রেশনিজম আর্ট ইত্যাদি সবধরনের পেইন্টিং এর অনুশীলন করছি। ইতোমধ্যে সাড়াও পেয়েছি বেশ। ছবি আঁকার মাধ্যম হিসেবে আমার প্রথম পছন্দ এক্রেলিক রং। মর্ডান টেক্সচারে প্যালেট নাইফ পেইন্টিং এর কাজও বেশ উপভোগ্য আমার কাছে। নিজের জন্য কিছু স্কেচও করি মাঝেমধ্যে। পরবর্তীতে মিক্সমিডিয়ায় কিছু পপ আর্ট করার ইচ্ছা আছে।’

চা এর রাজধানিতে এক কাপ চা

তিনি দেশকে ফুটিয়ে তুলছেন ক্যানভাসে সে বিষয়ে কিছু শোনা যাক,
‌’উই এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যখন দেখলাম রাজীব স্যার বার বার দেশি পন্য নিয়ে কাজ করতে উৎসাহ দিচ্ছেন। দেশকে বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করার স্বপ্ন দেখছেন তখন চিন্তা করতে থাকলাম কিভাবে পেইন্টিং দিয়ে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করবো। সেই ভাবনার সমাধান পেলাম। শুরু করলাম বাংলাদেশের বিখ্যাত পর্যটন এলাকাগুলোকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলার। সেই সাথে দেশের পন্যকে উপস্থাপন করার চেষ্টা। আমার করা “চা এর রাজধানীতে এক কাপ চা” ছবিটি সেই ভাবনারই বহিঃপ্রকাশ। ইনশাআল্লাহ সুযোগ এবং আপনাদের ভালোবাসা পেলে আমি আমার গোটা বাংলাদেশকে আস্তে আস্তে একেকটি ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলবো। সেই সাথে বিভিন্ন আঙ্গিকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। যদিও সময় সাপেক্ষ তবু আমি স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ কে “সৌখিন ছবিঘর” এর মাধ্যমে বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করার।

প্রাতিষ্ঠানিক হাতেখড়ি না থাকলে কী এসে যায়? কথা হলো সে বিষয়েও, ‘ছবি আঁকার প্রাতিষ্ঠানিক হাতেখড়ি না থাকার কারনে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়তো কিছুটা সময়সাপেক্ষ হবে। কিন্তু আমার ইচ্ছা আছে এগিয়ে যাবার কেননা “উই” এর মাধ্যমে “সৌখিন ছবিঘর” এর পেইন্টিং ইতোমধ্যে প্রবাসে পাড়ি দেবার জন্য তৈরি। এজন্য “উই” এর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

চা এর রাজধানী

জীবনের এতো এতো স্বপ্ন পুরনের আশা তিনি করেন না তার ভাবনাটা হলো,
‘এত স্বপ্ন না পূরন হলেও পেইন্টিংটা ছাড়তে পারবো না কেননা মন খারাপে আমি ছবি আঁকি রং -তুলি-ক্যানভাস না হোক সাদা কাগজে কলম পেন্সিলে এঁকে যাই। চরম বিরক্ত হলে সেটা প্রকাশ করার অবস্থা না থাকলে কাগজে আঁচড় কাটি। এটাই আমি, আমি নিজেকে ভালোবাসি। নিজের জন্য বাঁচি আর নিজের জন্যই ছবি আঁকি যতক্ষণ সেটা মন মত না হয় ততক্ষণ লেগে থাকি তার পেছনে।

রহস্য

কল্পনা যখন ক্যানভাসে- নুসরাত জাহান বলেন,
‘পেইন্টিংকে ভালোবাসি তাই আমি আমার কল্পনাশক্তি ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করি। আমার দক্ষতা আছে মানুষের সাথে কথা বলে তার রুচি পছন্দ বোঝার এবং যতক্ষন নিজে সন্তুষ্ট না হই ততক্ষন পেইন্ট নিঁখুত করতে চেষ্টা করি প্রতিটা পেইন্টিং এর মনের মত নাম দেই। উদ্যোক্তা হিসেবে কতটুকু সফল হবো জানিনা। ভাগ্য বদলের চেষ্টা চলছে, আল্লাহ সহায় হলে বদল ঘটবে হয়তো। কিন্তু আমার আঁকিবুকি থেমে যাবে না। পেইন্টিং নিয়ে যেই উৎফুল্লতা, যেই আকর্ষন সেটা কখনও কমবে না।’

শেয়ার করুন :